অটিজম কি?
অটিজম হচ্ছে শিশুদের মস্তিস্কের এক ধরনের বিকাশগত প্রতিবন্ধকৃতা, যার লক্ষণ শিশুর জন্মের ৩ বছরের ভিতর প্রকাশ পায় অটিজমে আক্রান্ত শিশুর ভেতর সামাজিক আচার আচরণ, যোগাযোগ ও ব্যবহারের প্রচন্ড সমস্যা লক্ষ্য করা যায় বির্তমান অটিজমকে বিশেষজ্ঞরা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার বা এএসডি বলে আখ্যায়িত করেছেন। যার ফলে সামান্য সমস্যা থেকে শুরু করে অধিক সমস্যাগ্রস্থ শিশু এর আওতায় চলে এসেছে। আমেরিকার মনোরোগ চিকিৎসক লিউ ক্যানার ১৯৪৩। সালে সর্বপ্রথম অটিজম আবিস্কার করেন। অতি সম্প্রতি নিউজ উইক এর এক সংখ্যায় জানা যায় আমেরিকার প্রায় ১৬৬ জনে ১ জন, জাপানে প্রতি ৪৭৬ জনে ১ জন এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ৫০০ জনে ১ জন অটিজমে আক্রান্ত। বাংলাদেশে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের সঠিক হার এখন পর্যন্ত বিজ্ঞান ভিত্তিকভাবে নির্ণয় করা হয় নাই। তবে এই হার যে দ্রুত বেড়ে চলেছে এতে কোন সন্দেহ নেই। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অটিজম আক্রান্ত হবার প্রবনতা বেশী রয়েছে যার অনুপাত ১:৪।
অটিজমের মূল বৈশিষ্ট্য
১। মৌখিক ও অমৌখিক যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা
২। কাঙ্খিত সামাজিক আচরণে সমস্যা
৩। খেলার ক্রিয়া কলাপে এবং কল্পনা যুক্ত খেলার সমস্যা
এই মূল বৈশিষ্ট্যর ভিত্তিতে যে আচরণ গুলি একজন অটিস্টিক শিশুর মধ্যে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলির নিম্ন রূপ-
যোগাযোগের ক্ষেত্রে
নাম ডাকলে সাড়া দেয় না।
কি চায় বলতে পারে না।
কথা বলা শিখতে বিলম্ব হয়।
কোন নির্দেশ অনুসরণ করে না।
কখনও কখনও বধির মনে হয়।
কখনও কখনও কানে শোনে বলে মনে হয়।
আঙ্গুল দিয়ে দেখায় না বাটা টা, বাই বাই করে না।
পূর্বে কিছু শব্দ বলত, এখন বলে না।
সামাজিকতার ক্ষেত্রে
সামাজিক কারণে কাউকে দেখে মুচকি হাসি হাসে না।
একা একা খেলতে পছন্দ করে।
নিজেই প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে নেয়।
খুব শীঘ্র সবকিছু করে।
চোখে চোখে তাকানোর ব্যাপারে দূর্বল।
নিজের জগতে থাকে।
সবার থেকে নিজেকে বিছিন্ন করে রাখতে পছন্দ করে।
অন্য শিশুদের প্রতি আগ্রহী নয়।
আচরণের ক্ষেত্রে
বদ মেজাজ/জিদ করা।
অত্যন্ত-চঞ্চল/অসহযোগী বা বিপরীতমুখী।
খেলনা দিয়ে খেলতে জানে না।
বারংবার একই জিনিসে আটকে যায়।
বুড়ো আঙ্গুলের উপর ভর করে হাটে।
কোন খেলনার প্রতি অসাধারণ আসক্তি।
কোন কোন শব্দ বা texture এর প্রতি অতিরিক্তি সংবেদনশীল।
• চলাফেরার ধাঁচে অস্বাভাবিকতা।
এছাড়া অটিস্টিক শিশুদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়গত সমস্যা থাকে যেমন: দৃষ্টি, স্পর্শ, শব্দ, স্বাদ, ঘ্রান ইত্যাদির প্রতি কম বা বেশী সংবেদনশীল হয়ে থাকে। আরো দুটো আছে
আসন সীমিত মোবাইল: ০১৭০৭-৭৪৪৪৪০
অটিজমের কারণ ও চিকিৎসা:
অটিজমের কোন সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে জেনেটিক ফ্যাক্টর খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেখা গেছে একই জনন কোষজাত অভিন্ন যমজদের (মনোজাইগোটিক টুইন) উভয়ের মধ্যে অটিজমের হার ৬০-৮০%, সহোদর ভাইবোনদের মধ্যে অটিস্টিক বৈশিষ্ট্য থাকার সম্ভাবনা ৩-৫%। পরিবেশজনিত কারণ (এম এম আর ভ্যাকসিন, খাবারের গুটেন, ক্যাসিন, ক্যান্ডিজ এলাবিকনস নামক ছত্রাক ইত্যাদি) কে সন্দেহ করা হলেও কোন বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রমাণ নিশ্চিত করা যায়নি। জন্মের পূর্বে ও পরে মস্তিকের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে অটিজমের জন্য দায়ী করা হয়। যেহেতু অটিজমের কোন সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় নাই সেহেতু এর সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা এখন পর্যন্ত অবিষ্কার হয়নি। অটিজমের কোন অলৌকিক নিরাময় নেই। অটিজম এর চিকিৎসায় ঔষধের ব্যবহার খুবই সীমিত। শুধুমাত্র আক্রমনাত্মক ও বিপদজনক আত্মঘাতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক চিকিৎসক ঔষধের পরামর্শ দেন।
অটিজম ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা:
আমাদের মধ্যে অনেকেই অটিজমকে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা হিসেবে মনে করে। কিন্তু বাস্তবে তা সঠিক নয়। বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা ও অটিজমের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিকাশের প্রতিটি স্তর সমান গতিতে চলে। কিন্তু অটিজমে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে বিকাশ সর্বক্ষেত্রে সমান গতিতে বৃদ্ধি পায় না।
অটিজম সম্পর্কে সকলের সচেতনতা প্রয়োজন। কুসংস্কার, ভূল ও অপূর্ণ তথ্য থেকে দূরে থেকে সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত সঠিক বিজ্ঞান ভিত্তিক জ্ঞান আহরণ করা এবং তার যথাযথ প্রয়োগের চেষ্টা করা। মনে রাখতে হবে অটিজমের মিরাকেল কোন চিকিৎসা নেই। তবে দ্রুত অটিজম নির্ণয় এবং আচরণ পরিমার্জনে সঠিক প্রশিক্ষণ, অকুপেশনাল থেরাপী, ডেভেলপমেন্ট থেরাপী, স্পীচ থেরাপী অটিস্টিক শিশুদের সামগ্রিক উন্নতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ও স্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রতিটি অটিস্টিক শিশু কিশোরদের তাদের প্রতিভা ও সীমাবদ্ধতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে একটি যথোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে পারলে এই শিশুরা বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারে। তাই আসুন আমরা সকলে মিলে অটিস্টিক শিশুর জন্য এমন একটি পৃথিবী তৈরী করি যা হবে সত্যিকার অর্থে তাদের বিকাশের জন্য ইতিবাচক।
SCCO এর কার্যক্রম সমূহ নিম্নরূপ:
১ ফিজিওথেরাপি
২. অকুপেশনাল থেরাপি
৩. স্পীচ থেরাপি
৪. বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
৫. খেলাধুলা
৬. চিত্ত বিনোদন
৭. সেবা প্রদানকারী ও অভিভাবকদের প্রশিক্ষণ
৮. প্যারেন্টস কাউন্সিলিং
৯. আউটিং ও পরিবার পরিদর্শন
১০৮ কেস ব্যবস্থাপনা
১১. প্রতিবন্ধী ও অটিজম বিষয়ে জনসচেতনার উন্নয়ন
SCCO Rajshahi
ReplyDelete